স্পট ফিক্সিং নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কাটিয়ে ফিরেছেন এবারের বিপিএলে। ভক্তরা তাঁকে নিয়ে বরাবরই আশান্বিত। আজ না হোক, কাল মোহাম্মদ আশরাফুল ভালো খেলবেন-ই! শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজও এমন আশার বুদ্বুদ উঠেছিল আশরাফুলকে নিয়ে। মঞ্চটাও মোক্ষম— রান তাড়া করে ম্যাচ জেতানো। কিন্তু আশরাফুল এখনো ‘আশার ফুল’ হয়েই রইলেন। ভক্তরা মনের বাগানে তাঁকে নিয়ে চাষাবাদ করেই যাচ্ছেন, কিন্তু ফলের দেখা নেই!
বিপিএলে এ পর্যন্ত দুটি ম্যাচ খেললেন আশরাফুল। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও এমন সুযোগ পেয়েছিলেন। মাত্র ৯৮ রান তাড়া করতে নেমে তাঁর অবদান ছিল ৫ বলে ৩। অনেক দিন পর ফেরায় মানিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপার থাকে বলেই হয়তো তা কেউ মনে রাখেনি। কিন্তু আজ আশরাফুল নিজেই আশা জাগিয়ে দপ করে নিভে গেলেন! সিলেটের ৫ উইকেটে ১৬৮ রানের স্কোর তাড়া করতে নেমেছিল চিটাগং ভাইকিংস। প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ শাহজাদকে হারিয়ে বিপদে পড়েছিল চিটাগং। আশরাফুল ধরে খেলছিলেন। ঠিক টি-টোয়েন্টি কেতার ব্যাটিং না করলেও চেষ্টা করছিলেন। তিন চারে করেন ২৩ বলে ২২ রানে। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দপতন।
আশরাফুলকে নিয়ে এ যেন চিরায়ত দৃশ্য। চিটাগং আগের ওভারে (অষ্টম) ক্যামেরন ডেলপোর্টকে হারালেও বাউন্ডারি পেয়েছিলেন আশরাফুল। কিন্তু পরের ওভারে শিকার হন পুরোনো বদঅভ্যাসের। তাসকিনের লেংথ বল আড়াআড়ি পুল করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ডিপ মিডউইকেটে। ৯.৩ ওভারে চিটাগং তখন ৩ উইকেটে ৬৯। এখান থেকে ‘টাইম আউট’ নিয়ে সিলেট কিনা ম্যাচটাই ঘুরিয়ে দিল!
শেষ ১১ ওভারে ৯৭ রান দরকার ছিল চিটাগংয়ের। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে খুব কঠিন কোনো লক্ষ্য নয়। কিন্তু চিটাগংয়ের মিডলঅর্ডার কুলিয়ে উঠতে পারেনি। আশরাফুল আউট হওয়ার পরের ওভারে মুশফিকুর রহিমও (৫) স্পিন বলে পুল করতে গিয়ে ধরা পড়েন ডিপ মিডউইকেট অঞ্চলে। শটটি একটু আগে খেলে ফেলার খেসারত গুনেছেন মুশফিক। ১৩তম ওভার শেষে চিটাগং ৫ উইকেটে ৯৪। মুশফিকের পাশাপাশি দাঁড়াতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেনও। অলক কাপালির বল অযথাই লেগ সাইডে টানতে গিয়ে ফিরেছেন মোসাদ্দেক (৭)। আশরাফুলের তখন নিশ্চয়ই আক্ষেপ হয়েছে। তিনি আরেকটু সময় উইকেটে থাকলে দল তো এমন চাপে পড়ত না!
চিটাগংয়ের এখান থেকে জেতার সুযোগ ছিল। শেষ ৩০ বলে ৬০ রান দরকার ছিল দলটির। উইকেটে ‘সেট’ সিকান্দার রাজা এবং অন্য প্রান্তে আগের ম্যাচের সেরা রবি ফ্রাইলিঙ্ক। পরের দুই ওভারে মোট ১৯ রান তুলে ম্যাচটা জমিয়ে তোলেন দুজন। কিন্তু শেষ তিন ওভারে ৪১ রানের সমীকরণে দাঁড়িয়ে থাকা চিটাগংকে ১৮তম ওভারে এসে বড় ধাক্কা দেন তাসকিন। ওই ওভারে মাত্র ৩ রান দেওয়ার পাশাপাশি পর পর দুই বলে রাজা (৩৭) ও নাঈম হাসানকেও তুলে নেন এই পেসার। ১২ বলে ৩৮ রানের দূরত্বে পিছিয়ে চিটাগং তখন হারের শঙ্কায়।
মোহাম্মদ ইরফানের করা ১৯তম ওভারে ফ্রাইলিঙ্ক দুটো ছক্কা মারলেও আসল সর্বনাশটা হয়েছে শেষ বলে। ফ্রাইলিঙ্ক ১ রান নিতে না পারায় শেষ ওভারে স্ট্রাইকে যান স্পিনার সানজামুল ইসলাম। ওদিকে শেষ ওভারে চিটাগংয়ের দরকার ২৪ রান। পেসার আল আমিনের করা প্রথম বলে ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন ফ্রাইলিঙ্ক। বাকি ৫ বলে দরকার ২৩। দ্বিতীয় বলে আল আমিন ইয়র্কার মারতে গিয়ে ফুল টস দেওয়ায় স্ট্রেট অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মারেন ফ্রাইলিঙ্ক। পরের বলেও একই চেষ্টা করলেও এসেছে মাত্র ২ রান। ৩ বলে চিটাগং ১৫ রানের দূরত্বে থাকতে তৃতীয় বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডার। টান টান উত্তেজনায় ডুবে যায় ম্যাচ। ২ বলে দরকার ৯ রান।
পঞ্চম বলে ফ্রাইলিঙ্ক মাত্র ২ রান নেওয়ায় শেষ বলে ৭ রান দরকার ছিল চিটাগং। পরের বলে অলৌকিক কিছু না ঘটায় সমীকরণ ওখানেই শেষ। শেষ বলে মাত্র ১ রান নিতে পেরেছেন ফ্রাইলিঙ্ক। ২৪ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা ফ্রাইলিঙ্ককে তাই আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। চিটাগংয়ের ইনিংস থেমেছে ৭ উইকেটে ১৬৩ রানে। ৫ রানের এই জয়ে বিপিএলে এবার জয়ের খাতাও খুলল সিলেট।
সিলেটের সেরা বোলার ছিলেন তাসকিন আহমেদ। ২৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের প্রত্যাবর্তনের বার্তাটা ভালোভাবেই দিয়ে রাখলেন এই পেসার।