Home বাংলাদেশ ইভিএম নয় সেনাবাহিনী মোতায়েন , হাসিনার অধীনে নির্বাচন না : খালেদা

ইভিএম নয় সেনাবাহিনী মোতায়েন , হাসিনার অধীনে নির্বাচন না : খালেদা

1435
0
SHARE

বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের যদি সত্যিকারের নেতা-কর্মী থাকে, তাহলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। হাসিনার অধীনে তো নির্বাচন হবেই না।’ তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, যেকোনো জায়গায় সমাবেশ হলে বিএনপির নেতা-কর্মী এবং জনগণ আসবে। মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। জনগণই বিএনপির ভরসা।

রবিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষ দিকে এসব কথা বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ৭ নভেম্বর দিনটিকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সমাবেশটি আয়োজন করে বিএনপি। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি রবিবারের জনসভায় সরকার বিভিন্ন উপায়ে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের জন্য আমাদের দাবির কথা দিয়েছি। সেখানে বলেছি যদি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে হয়, তাহলে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করতে হবে। আজ নির্বাচন কমিশনার কেন বলে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে না, ইভিএম হবে। তার মানে সরকার যা বলছে তাই তাঁরা করতে চায়।’

১৯ মাস পর রাজধানীতে আয়োজিত সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকের হাহাকার, নির্বাচন কমিশন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। তবে প্রতিবারই তিনি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা উচ্চারণ করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের যদি সত্যিকারের নেতা-কর্মী থাকে, তাহলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। হাসিনার অধীনে তো নির্বাচন হবেই না।’ তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, যেকোনো জায়গায় সমাবেশ হলে বিএনপির নেতা-কর্মী এবং জনগণ আসবে। মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে। জনগণই বিএনপির ভরসা।

আওয়ামী লীগকে শুদ্ধ করে মানুষ বানানোর কথা বলেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সাধারণ সম্পাদক মাঝে-মাঝে দু’য়েকটা সত্য কথা বলে ফেলেন। উনি বলেছেন, নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য ক্ষমতায় থাকতে হবে। আমি বলি, না আমরা আপনাদের মতো মানুষ ধরবো, মারব বা জেলে পুরবো সেটা হবে না। আমরা সহিংসতার রাজনীতি করি না। আমরা চাই, শুদ্ধ করতে।’এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া যোগ করেন, ‘আপনাদেরকে শুদ্ধ করব। আপনারা যে মানুষ মারেন, খুন করেন, এগুলো যে খারাপ কাজ। এগুলো বাদ দিয়ে আপনাদের সত্যিকারের মানুষ বানাবার চেষ্টা আমরা করবো।’

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আশ্বাস দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, সরকার সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের হয়তো বলে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা হবে। বিএনপি হিংসার রাজনীতি করে না। তিনি বলেন, ‘আমরা দক্ষতা-যোগ্যতা দেখব। বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বলে কিছু নেই। দক্ষতা-যোগ্যতা দেখা হবে। বিএনপি লোক হত্যার রাজনীতি করে না। লোক হত্যার রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ।

খালেদা জিয়া সমাবেশে অভিযোগ করেন, ‘এ সরকার ২০০৮ সালে দেশবাসীকে কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবে। আজকে ৭০ টাকায় কেজিতে চাল খাচ্ছে কেন মানুষ? তার জবাব চায় মানুষ হাসিনা সরকারের কাছে। জনগণ জানতে চায় কেন ১০ টাকার বদলে ৭০ টাকায় চাল খাচ্ছে। প্রতিটি সবজির দাম ৭০ টাকার কমে নয়। এ দুরবস্থায় মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করবে? প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।’

সরকারের কিছু ‘টাউট-বাটপার’ দেশে সংকট তৈরি করছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার কৃষককে বিনা মূল্যে সার দেওয়ার কথা বলেছিল। সেখানে এখন কৃষকদের মারার ব্যবস্থা করেছে সরকার। সরকারের কাছ থেকে কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কৃষক। জনগণের জীবন এখন দুর্বিষহ।

প্রধান বিচারপতিকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে বিচার বলে কিছু নেই। প্রধান বিচারপতিকে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) পর্যন্ত জোর করে অসুস্থ বানিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিদেশে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোক পাঠিয়ে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। কারণ, প্রধান বিচারপতি সত্য কথা বলেছিলেন। তিনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছিলেন, সরকার নিম্ন আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের ওপরও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে—এ কারণেই তাঁকে বিদায় করা হলো।

২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে ও ৩১ অক্টোবর ফেরার সময় ফেনীতে তার বহরে হামলার প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ফেনীতে সন্ত্রাসী হামলা করে সাংবাদিকদের, আমাদের দলের নেতাকর্মীদের আহত করা হয়েছে। বাসে আগুন দেয় আওয়ামী লীগ। অতীতে শেরাটনের কাছে গান পাউডার দিয়ে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছিলো। এই দলের অপকীর্তির শেষ নেই।’

বিকাল সোয়া তিনটা নাগাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। বিকাল ৪.১০ মিনিটে খালেদা জিয়া বক্তব্য শুরু করার আগে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.